Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Image
Title
office of deputy land reforms commissioner,rajshahi divishion, rajshahi.
Details

 

রবীন্দ্র কাচারি বাড়ি

শাহজাদপুরে লেখা একটি কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

‘‘নদী ভরা কূলে কূলে, ক্ষেত ভরা ধান।

আমি ভাবিতেছি বসে কি গাহিব গান।

কেতকী জলের ধারে

ফুটিয়াছে ঝোপে ঝাড়ে,

নিরাকুল ফুলভারে বকুল-বাগান।

কানায় কানায় পূর্ণ আমার পরাণ’’

(ভরা ভাদরে- সোনার তরী)

 

রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ মোট ৭ বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে আসা-যাওয়া এবং অবস্থান করেছেন। তার এই শাহজাদপুরে আসা-যাওয়া শুধু জমিদারি তত্ত্বাবধানের বস্তুনিষ্ঠ প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এই জমিদারির প্রয়োজনকে ছাপিয়ে প্রাধান্য পেয়েছে কবির সাহিত্য সৃষ্টির অনুপ্রেরণা ও সৃজনশীলতা। এই সময়ের মধ্যে এখানে তিনি তাঁর অনেক অসাধারণ কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। এর মধ্যে ‘সোনার তরী’ কাব্যের ‘ভরা ভাদরে’, ‘দুইপাখি’ ‘আকাশের চাঁদ’, ‘হৃদয় যমুনা’, ‘প্রত্যাখ্যান’, ‘বৈষ্ণব কবিতা’, ‘পুরস্কার’ ইত্যাদি অসাধারণ কবিতা রচনা করেছেন। ‘চৈতালী’ কাব্যের ‘নদীযাত্রা’, ‘শুশ্রূষা’,‘ইছামতি নদী’, ‘বিদায়’, ‘আশিস-গ্রহণ’ ইত্যাদি কবিতা এবং ‘কল্পনা’ কাব্যের ‘যাচনা’, , ‘বিদায়’, ‘নরবিরহ’, ‘মানস-প্রতিমা’, ‘লজ্জিতা’, ‘সংকোচ’, ইত্যাদি বিখ্যাত গান রচনা করেছেন। তাঁর শাহজাদপুরে রচিত ছোটগল্পের মধ্যে ‘পোষ্টমাস্টার’, ‘ছুটি’, ‘সমাপ্তি’, ‘অতিথি’ ইত্যাদি বিখ্যাত। আর প্রবন্ধের মধ্যে ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’, ‘পঞ্চভূত’, এর অংশবিশেষ এবং ‘ছিন্নপত্র’ ও ছিন্নপত্রাবলীর আটত্রিশটি পত্র রচনা করেছেন। এছাড়া তার ‘বিসর্জন’ নাটকও এখানে রচিত। সবচেয়ে বড় কথা, তার পরবর্তী সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে শাহজাদপুরের প্রভাব বিশেষভাবে বিদ্যমান।

 

ঠাকুর পরিবারে জমিদারি ভাগাভাগির ফলে শাহজাদপুরের জমিদারি চলে যায় রবীন্দ্রনাথের অন্য শরীকদের হাতে। তাই ১৮৯৬ সালে তিনি শেষ বারের মতো শাহজাদপুর থেকে চলে যান। এর পরে তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি। শাহজাদপুর ছিল রবীন্দ্রনাথের অত্যান্ত প্রিয় এবং ভালোবাসার একটি স্থান। তাঁর ভালোবাসার কথা তিনি বিভিন্ন লেখায় বিশেষ করে ‘ছিন্নপত্র’ ও ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে গভীর আবেগ এবং আন্তরিকতার সাথে উল্লেখ করেছেন। ১৮৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শাহজাদপুর থেকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘ এখানে (শাহজাদপুরে) যেমন আমার মনে লেখার ভাব ও ইচ্ছা আসে এমন কোথাও না।’’ (ছিন্নপত্র- পত্র সংখ্যা-১১৯) এছাড়াও অন্যান্য লেখাতেও শাহজাদপুর সম্পর্কে তাঁর আবেগময় ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মৃত্যুর এক বছর আগে ১৯৪০ সালে শাহজাদপুরের তৎকালীন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হরিদাস বসাকের চিঠির জবাবে তিনি লিখেছেন,‘শাহজাদপুরের সাথে আমার বাহিরের যোগসূত্র যদিও বিচ্ছিন্ন তবুও অন্তরের যোগ নিবিড়ভাবে আমার স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। আমার প্রতি সেখানকার অধিবাসীদের শ্রদ্ধা এখনো যদি অক্ষুন্ন থাকে তবে আমি পুরস্কার বলে গণ্য করব’’ (শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ-মোহাম্মদ আনসারুজ্জামান)। শাহজাদপুরের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই ভালবাসা একে দিয়েছে মর্যাদা ও গৌরবের এক ভিন্ন মাত্রা। শাহজাদপুরও রবীন্দ্রনাথকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে হৃদয়ে লালন করছে। প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী কবির স্মৃতিধন্য এই স্থানটি দর্শনে আসেন।

 

এছাড়া প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিন ব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালিত হয়। এই জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। রবীন্দ্র-কাচারিবাড়ীর মিলনায়তনে কোনভাবেই স্থান সংকুলান হয় না। তাই একান্ত প্রয়োজন দেখা দিয়েছে একটি রবীন্দ্র মুক্ত মঞ্চের। কাচারিবাড়ীর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে একটি মুক্তমঞ্চ নির্মাণের মতো যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। কাচারিবাড়ীর প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখার জন্য যা কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তা জরুরী ভিত্তিতে গ্রহণ করার পরামর্শ সুধী মহলের। সাম্প্রতিককালে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী দলমত নির্বিশেষে এখানকার সব মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নামে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান আছে বলে জানা নেই।